74Th pOsT : অভীক দত্ত


ইন্টারনেট আর এলোমেলো কিছু ভাললাগা

ক) ইন্টারনেট আর সোশ্যাল নেটওয়ার্কিংএর ফলাফলঃ
ইন্টারনেট যতটা না আলোড়ন তুলেছিল তার থেকে অনেক বেশি আলোড়ন তুলে ফেলল সোশ্যাল নেটওয়ার্কিং সাইটগুলি। প্রথমে অরকুট পরে ফেসবুক আসায় “কবিতা” আর কবিতার আলোচনা, তার সাথে আলোচনার জন্য নিজেদের পিঠ চাপড়ানির দল, আর “আপনার দ্বিতীয় লাইনের তৃতীয় শব্দটি যদি পরিবর্তন করতেন” এই জাতীয় কথাবার্তার জোয়ার এল। কবিতা আর নিভৃত চর্চার বস্তু থাকল না, বারোভাতারি(ইচ্ছা করেই এই শব্দের ব্যবহার) হয়ে গেল। সব জিনিসেরই যেমন একদিকে ভাল আর খারাপ থাকে ইন্টারনেট আর সোশ্যাল নেটওয়ার্ক সাইটগুলির দৌলতে সেই ব্যাপারগুলিও আমাদের কাছে পরিষ্কার হয়ে গেল। একদিকে যেমন এই দলবল নিয়ে ভার্চুয়াল জগতে আছড়ে পরাটা সোজা হয়ে গেল, অন্যদিকে এই ইন্টারনেট আর সোশ্যাল নেটওয়ার্কের মাধ্যমেই আমরা এমন কিছু কবিকে পেলাম, যেটা হয়ত এদের অনুপস্থিতিতে অনেক কঠিন হয়ে যেত। যদিও বলা হয়ে থাকে প্রতিভা আর চুলকুনি কখনও লুকিয়ে রাখা যায় না, তবু অনেক প্রতিভাই আড়ালে পরেই থাকত ইন্টারনেটের অভাবে একথা বলাই যায়। এবার আপনি, বিদগ্ধ পাঠক বলতেই পারেন এখনও তো অনেকে ইন্টারনেটের ব্যবহার করেন না তার বেলা কি হয়, সেক্ষেত্রে আমি আপনার কথা মেনে নিয়েও বলব এই পারসেন্টেজটা এখন অনেক কমেছে।  আবার এমন অনেকে আছেন যারা ফেসবুকে কবিতার চর্চা দেখেই প্রথম কবিতা লেখার কথা ভেবেছেন এবং লিখেছেন। তাহলে আসুন দেখা যাক ব্যাপারটা কি দাঁড়াল
১) এক শ্রেণীর কবি যারা আগে কবিতা লিখেছেন পরে ইন্টারনেট ব্যবহার করে সোশ্যাল নেটওয়ার্কিং করেছেন
২) যারা আগে সোশ্যাল নেটওয়ার্কিং করেছেন পরে কবিতা লিখেছেন বাকিদের দেখে উদ্বুদ্ধ হয়ে।
এবার আপনি চশমা উঁচু করে বলতেই পারেন “সবই তো বুঝলুম কিন্তু বলুন তো পাঠক আছে কয়জনা?”
#
প্রাসঙ্গিক কিনা জানি না তবু কেন জানি না প্রকল্প ভট্টাচার্যের এই কবিতাটা দেবার লোভ সামলাতে পারলাম না
দিনটা বিকোয় আস্তাকুঁড়ে, চিন্তা বিকোয় রাতে,
 সব কবিরাই বেজন্মা, আর লেখকরা হাভাতে
 অনুভবের আবর্জনা, আবেগ এঁটো কাঁটা,
চুরির দায়ে পড়লে ধরা গালি, লাথি, ঝাঁটা,
 তবু নিলাজ, বুক ফুলিয়ে বেড়াচ্ছে রাস্তাতে!
সব কবিরাই বেজন্মা, আর লেখকরা হাভাতে
ঘেন্না পিত্তি দুএক টাকা কেউ বা যদি দিলো,
 কলম ছেড়ে মনের মলম চোলাই দুঢোক গিলো
 স্বপ্ন উকুন বাইছে মাথায়, নোংরামি ভাষাতে,
 সব কবিরাই বেজন্মা, আর লেখকরা হাভাতে

খ)
আজকাল যাদের লেখা পড়ছিঃ
শুভদীপ দত্ত চৌধুরী তরুণ কবি। মেদিনীপুরের ছেলে। অথচ ওর কবিতায় আমি একটা নাগরিক ছোঁয়া পাই। এক অদ্ভুত ভাললাগা আসে শুভদীপের কবিতা পড়লে। ভেতর থেকে ভাললাগাটা আসে। গভীরতাটা আপনা আপনি এসছে শুভদীপের কবিতায়,
বিছানায় ঘুমিয়ে বউ মাঝরাতে পরকীয়া টান
এলো দিন মেলো রাত। ভেনাস বারান্দায় দাঁড়ান
লোডশেডিং। ধুত্তেরি। ফ্ল্যাটবাড়ি কান-ঘেঁষে মেঘ
কি করে দেখব তাকে। গুঁড়ি গুঁড়ি ইলশে-উদ্বেগ

চলে যাচ্ছ ভিনদেশ। তোমার বিবাহদিন স্থির
ঘুরঘুটে মনখারাপ। আনত চোখ। পাখির নীড়
ফোন করি। রিং বাজে। আর যত শহুরে অভ্যাস
বেজে চলে অবিরাম। আমি আর আমার ভেনাস

এই গুঁড়ি গুঁড়ি ইলশে-উদ্বেগের মত শব্দ চয়ন কিংবা ভেঙে ভেঙে বাক্য গঠন, “ঘুরঘুটে মনখারাপ। আনত চোখ। পাখির নীড় যেটা শুভদীপের কবিতার মধ্যে এসেছে স্বাভাবিক নিয়মেই, আমার বেশ ভাল লেগেছে।

কিংবা দামিনীর ঘটনা নিয়ে ওর নিঃশব্দ বিপ্লব
আর যাহারা পালিয়ে বাঁচলেন
খড়ের গাদায়, উনুনশালের তাপ
ফোস্কা তোলে প্যাডের গায়ে পেন
পৃষ্ঠা জুড়ে শরীর-অভিশাপ

নৈঋতে মেঘ। ঘর-পালানোর গান
ঘুমের ভেতর ঠিকানাহীন ক্রেশ
রাতদুপুরে ব্যথার অবসান
এসপ্ল্যানেডে মৌন সমাবেশ

কয়েকটি লোক মোমবাতিদের ঢল
মিছিল চলে আগামি সন্ধ্যার-
ওই দেখা যায় সীমানা অঞ্চল
সম্মুখে নীল শান্তিপারাবার

বোঝাই যায় ছেলে লম্বা দৌড়ের ঘোড়া...
#
---- সাপ বিষয়ে তিনটি মুস্কিল ------

মুস্কিল : সরলরেখার গতিবিধি সাপেরা বোঝেনা
মুস্কিল : সাপের দু'মুখ এক সরলরেখায় দাঁড়িয়ে দেখা যায়না
মুস্কিল : রূপকথার জাদুকরের মতো আমি সাপের ভাষা বুঝিনা
চমকে দেবার মত ভাষা,চিন্তার ওপর নিয়ন্ত্রন এবং বাক্যগঠন উজানের। আজকালকার ম্যাকডোনাল্ড, কে এফ সির সময়ে এই ধরণের লেখা পত্তর নড়ে চড়ে বসতে সাহায্য করে। বস্তুত এই যুগেও এই চিন্তাভাবনা পাঠক হিসেবে আপনাকে উৎসাহিত করতে বাধ্য
আমি বেশ শব্দহীনের মধ্যেই ঘুমচ্ছিলাম
হঠাৎ দেওয়ালদের ডাকাডাকিতে উঠে বসেছি

আমার মুখ ঘুরিয়ে রাখা ক্যানভাস তখন দুমড়ে মুচড়ে ঘুরে দাঁড়িয়েছে

বাঁ দিক থেকে তীব্র হলুদ রঙ আছড়ে পড়ে জিজ্ঞেস করল ,' ভালো আছো? তুমি তো আলোর দানব...'
উপর থেকে তির্যক কমলা হামলে পড়ে বলল ,'মরণ... এই ভালোটাই দেবতার মত...তুমি তো ভালো আছো '
নীচে থেকে ফুটফুটে নীল উঠে বলে 'আমি তো এখানে...এইখানে তোমার ভালো, এইখানে এসো গো দানব '
ওদিকে লাল আর সবুজ জামা খুলে দাঁড়িয়ে পড়ছে...নেমে আসছে...
যারা উঠেছিল, যারা নেমে আসছিল...সকলেই এখন নেমে আসছে... বিস্ফোরণ ঘটাবে... ঘটাবে...ঘটাল

এখন সমস্ত শব্দহীন আবার
আমি আবার ঘুমিয়ে পড়ছি কোন শব্দ না করে
সাদা ঘুম কালো হয়ে গেলেও আমার বালিশ আমার বালিশ প্রকাশ্যে গ্রহণ করে ঘুম
কবিতাটির কয়েকটি জায়গা ভাবনার রসদ যোগায়। রঙেদের ব্যবহারটাও চমকপ্রদ। যদিও কিছু কিছু জায়গা একটু দুর্বল ঠেকেছে তবু শুধুমাত্র এই কবিতাটার কনসেপ্টের জন্য উজান একটা হ্যাটস অফ পাবে।
আমি বিশ্বাস করি কবিত্ব দুই ধরণের হয়। কষ্ট করে লেখা। আর ভেতর থেকে আসা।
 এই দুজনের কবিতাটাই আসে ভেতর থেকে। তাই এদের পড়ার পরে পাঠকের মনেও প্রশান্তি আসে।
আলোচনা শেষ করব সৌরভের কবিতা দিয়ে। সৌরভ সরকার।  ছেলেটা ধুমকেতুর মত ফেসবুক করে। ন’মাসে ছ’মাসে এক আধবার আসে। আর মাঝে মাঝে এস এম এসে আমাকে কবিতা পড়াত। এখন বহুদিন হল সেটাও বন্ধ। তবু এখনও সৌরভের একটা কবিতা আমার দুঃস্বপ্নের সাথে কেমন যেন মিলে যায়।
দরখাস্ত লেখার মতো সুন্দর হয়ে/খাট বালিশের প্রয়োজন কিনেছে
প্রচার এখন বিচার ছাড়ায় পণ্য...
পরীক্ষাগুলো ধড়ফড় করে উঠে পড়েছে বিছানায়..
প্রতিযোগিতা ? শুধু ইঁদুরের ডাকনাম হয়ে যাক
(দৌড়)
ছেলেটা অনেকদিন লিখছে না। পড়াচ্ছে না। জানি না লিখছে নাকি। এরা লেখা বন্ধ করে দিলে আমাদের কী হবে?